“শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড ” এই বুলি আওড়ানোর মাধ্যমে হাতেখড়ি থেকে কবর পর্যন্ত সময় পার হয়ে যায়। আমরা কখনো ভেবে দেখেছি, আসলে যে শিক্ষাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে আমাদের এই জাতি গঠন হচ্ছে, এটা কী আদতে সেই কাঙ্খিত শিক্ষাব্যবস্থা যার মাধ্যমে একটি আদর্শবান, সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরি করা সম্ভব? আসুন বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা দিয়ে আমাদের প্রশ্নের জবাব অনুসন্ধান করি।
বাংলাদেশের ইতিহাসে যত আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ২৪ এর জুলাই আন্দোলন, যেটা বাংলাদেশের ২য় স্বাধীনতা হিসাবে সর্বাধিক সমাদৃত। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এই আন্দোলনে নেতৃত্ব স্থানীয় যারা ছিলেন তাদের নিয়ে এই জাতি যে স্বপ্নের বীজ অন্তরে বপন করেছিল, তা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম। হাতে গোনা কয়েকটা সেক্টর ছাড়া বেশিরভাগ সেক্টরেই জুলাই আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং অনেকাংশে সেটা প্রমানিত। বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে তাদের ব্যক্তিগত জীবনের উদাসীনতা, অনৈতিক কর্মকান্ডের ভিডিও কিংবা অডিও। ফলশ্রুতিতে এ জাতি তাদের উপর আস্থা হারিয়েছে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার পরও নৈতিকতার যে সংকট আমরা লক্ষ্য করেছি, সেটা জাতির জন্য কখনো শুভকর নয়।
জেলা প্রশাসকের অনৈতিক কর্মকান্ডের ভিডিও ভাইরাল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কতৃক বিভিন্ন সময়ে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি, রাজনীতিবীদ দের সমাজের প্রতি দায়িত্বজ্ঞানহীনতাসহ এই ধরনের কার্যকলাপ আমাদের সামনে এখন নিত্য দিনের ঘটনা। যা একটি জাতির জন্য ভয়ঙ্কর অভিশাপ।
উপরের ঘটনাগুলো থেকে আমাদের কাছে স্পষ্ট যে উচ্চশিক্ষা নয় বরং নৈতিকতাপূর্ণ শিক্ষাই একমাত্র জাতির মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করতে পারে। আর নৈতিকতা বিবর্জিত শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করবে এক মেরুদণ্ডহীন শিক্ষিত জাতি, যারা সমাজের প্রতি থাকবে চরম উদাসীন।
লেখক: ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
খুলনা গেজেট/এএজে